Thursday, September 11, 2025
বাঙালি কাউন্টডাউন
HomeScrollএখানে দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী, বৈচিত্র্যময় অযোধ্যার জমিদার বাড়ির পুজো
Ajodhya Zamindar Bari

এখানে দেবী ব্যাঘ্রবাহিনী, বৈচিত্র্যময় অযোধ্যার জমিদার বাড়ির পুজো

বন্দ্যোপাধ্যাদের জমিদার বাড়িতে দেবী দুর্গা চণ্ডীধরি

বাঁকুড়া: রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই জমিদারি উত্থান অযোধ্যা জমিদার বাড়ির। অযোধ্যার জমিদার বাড়ির পুজোর বৈচিত্র্য হল, এখানে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী ৷ শুধু তাই নয়, রয়েছে নজরকাড়া সাবেকিয়ানা ৷ দু’শো বছরেরও বেশি এই দুর্গাপুজোর জাঁকজমক আগের থেকে কমলেও, বন্দ্যোপাধ্যায়দের পুজোর ঐতিহ্য এবং রীতি আজও বজায় রয়েছে ৷ ব্যাঘ্রবাহিনী দেবী ভবতারিনী রূপে দেবী দুর্গার আরধনা আজও পালিত হয় অযোধ্যা জমিদার বাড়ির (Ajodhya Zamindar Bari) দুর্গাদালানে।

জমিদার বাড়ির চৌহুদ্দির মধ্যেই  ভাঙাচুরা জমিদার বাড়ি, ১২ শিবের মন্দির, গিরিগোবর্ধন মন্দির, রাসমঞ্চ, নাট মন্দির আর তার মাঝেই দেবী দুর্গার মন্দির নির্মান করে মহা সমারোহে ধুমধাম করে দুর্গাপুজা শুরু হয় প্রায় ২০০ বছর আগে। আজ জমিদার নেই নেই জমিদারি কিন্তু প্রাচীন রীতি মেনেই জমিদার বাড়ির দুর্গাদালানে নিষ্ঠার সাথে ব্যাঘ্রবাহিনী ভবতারিনী দেবী দুর্গার আরাধনায় মেতে উঠেন বংশধরেরা। জমিদারদের পুজোর সেই জৌলুস না থাকলেও রয়েছে পুজোর প্রাচীনত্ব ও আভিজাত্য। বাঁকুড়ার অযোধ্যার বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়িতে পুজো (Ajodhya Zamindar Bari Durga Puja) কদিন ফিরে আসে সেইসব নস্টালজিয়া।

এই পুজোর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে, অযোধ্যার জমিদারির ইতিহাস ৷ অযোধ্যা এস্টেটের প্রতিষ্ঠাতা রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচয় হয়েছিল এক নীলকর সাহেবের সঙ্গে ৷ ওই নীলকর সাহেবের কাছে প্রথমে কেরানীর চাকরি জোগাড় করেন তিনি । পরে কাজের দক্ষতার পরিচয় দিয়ে কেরানী থেকে বিশ্বস্ত হয়ে তাঁকে দেওয়ান পদ নিযুক্ত করে নীলকর সাহেবরা। পরবর্তীকালে ওই নীলকর সাহেব তার সম্পত্তির অর্ধেক ও ২২টি নীলকুঠি দান করে দেন রামমোহন কে। বাঁকুড়া জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে ২২ টি নীলকুঠী ও প্রচুর সম্পত্তি হাতে পেয়ে  বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামে জমিদারির সূচনা হয় বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। শোনা যায় এই বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে ছিল ১০০ টি মৌজা। তবে নীলকর সাহেবদের মতো বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার কখনো জোর করে চাষীদের নীল চাষে বাধ্য করত না। করা হত না অত্যাচারও । জমিদারির বিপুল আয়ে সেসময় অযোধ্যা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশাল জমিদারবাড়ি ও দেবোত্তর এস্টেট । এমনকি কাশী, বেনারস ও তৎকালীন বিহারের বিভিন্ন জায়গায় সম্পত্তি তৈরি করেছিলেন রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ জমিদারির রাজকোষে খাজনা জমা পড়ত প্রচুর পরিমাণে ৷ জমিদারির বিপুল আয়ে সেসময় অযোধ্যা গ্রামে ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশাল জমিদারবাড়ি ও দেবোত্তর এস্টেট ৷ জমিদার চৌহুদ্দির মধ্যে দ্বাদশ শিব মন্দির , গিরি গোবর্ধন মন্দির , রাস মন্দির, বিষ্ণুমন্দির, ঝুলন মন্দির ও দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠা করে শুরু হয় দুর্গাপুজো ।

আরও পড়ুন: নারী শক্তির আরাধনায় নারীরাই ‘ব্রাত্য’, প্রথা নাড়াজোল রাজবাড়ির পুজোয়

এখানে দেবী সিংহ বাহিনী নয় ব্যাঘ্রবাহিনী । শ্রী শ্রী চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে দেবীর যে ব্যাঘ্রবাহিনী রূপ বর্ণিত রয়েছে, সেই রূপেই পূজিত হন দেবী দুর্গা ৷ তাই বন্দ্যোপাধ্যাদের জমিদার বাড়িতে দেবী দুর্গা চণ্ডীধরি ৷ প্রতিমাতেও বিশেষ নজরকাড়া সাবেকিয়ানা রয়েছে । এখানে দেবীর মুখ ছাঁচে নয় বংশ পরম্পরা প্রতিমা শিল্পী এখানে হাতে তৈরি করেন দেবীর মুখ। জিতা অষ্টমীর পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজা। স্মৃতি। এরকম মূর্তি বাঁকুড়া জেলায় দ্বিতীয়টি দেখা যায় না। পুজোর সময় রূপোর ঘট নিয়ে পরিবারের মহিলারা দেবী দুর্গাকে বরন করে নেন। পুজো কদিন দেবী দুর্গার ভোগ ও প্রসাদ নিবেদন করা হয় রূপোর থালাতে।  আজ জমিদারি না থাকায় সেই জেল্লা কিছুটা কমেছে ঠিকই । কিন্তু আজও দেবীর পুজোয় নিষ্ঠার ঘাটতি নেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের । পুজোর কটা দিন বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি গমগম করে ফিরে আসে হারানো৷”

 

বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য এবং অযোধ্যার দেবোত্তর এস্টেটের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপক মনোহর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো শুরু করার সময় দেবী মূর্তিতে বিশেষত্ব চেয়েছিলেন ৷ তাই চণ্ডীমঙ্গলের বর্ণনা অনুযায়ী, দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী ৷ এখানে প্রতিমার মুখ ছাঁচে ফেলে তৈরি হয় না ৷ বংশপরম্পরার প্রতিমা শিল্পী দেবীর মুখ নিজের হাতে তৈরি করেন ৷ “শুরুর দিনে যে সমস্ত রীতি পালন করা হত, তা আজও মেনে চলার চেষ্টা করি আমরা ৷ এমনকি আগামী দিনে এই পুজোর ঐতিহ্যকে বজায় রাখার সম্পূর্ণ চেষ্টা আমরা পরবর্তী প্রজন্ম করে যাব ৷পরিবারের অধিকাংশ সদস্য বর্তমানে ভিনরাজ্য বা বিদেশে থাকেন ৷ তবে, দুর্গাপুজোর সময় সকলে ছুটি নিয়ে বাড়িতে ফেরেন ৷ পুজোর ক’টা দিন সকলে একসঙ্গে জমিয়ে আনন্দ করেন ৷

অন্য খবর দেখুন

Read More

Latest News